অবহেলিত সিলেট-উপদেষ্টাদের স্মৃতিহীন রাজনীতি ও আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন: জাসিমুল ইসলাম
এক সময় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সিলেটকে বলা হতো বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ।
কারণ, সিলেট শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নয়, বরং বুদ্ধিবৃত্তিক, অর্থনৈতিক, প্রবাসী অবদানের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
দেশের অর্থনীতির একটি বড় অংশ গড়ে উঠেছে প্রবাসী সিলেটিদের রেমিট্যান্সের ওপর, অথচ আজ সেই সিলেট যেন ক্রমেই অবহেলার অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে।
এই মাটিতে জন্ম নিয়েছিলেন অসংখ্য প্রজ্ঞাবান ও দূরদর্শী রাজনীতিবিদ, যাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
🎖️ সিলেটের প্রভাবশালী মন্ত্রীরা ও জাতীয় নেতা:
আবুল মাল আবদুল মুহিত – সাবেক অর্থমন্ত্রী, যিনি দেশের বাজেট ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করেছিলেন।
ড. এ কে আব্দুল মোমেন – পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বিশ্ব কূটনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান শক্ত করেছিলেন।
এম এ মান্নান – পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে উন্নয়ন পরিকল্পনায় সিলেটসহ দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে অবদান রাখেন।
নুরুল ইসলাম নাহিদ – শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে জাতীয় শিক্ষানীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
ইমরান আহমদ – প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী হিসেবে প্রবাসী সিলেটিদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করেছেন।
🔴 মুক্তিযুদ্ধে সিলেটবাসীর অবদান-
সিলেটবাসী ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ সাহস ও ত্যাগ দেখিয়েছে। তারা সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে গেরিলা ও শহর মুক্তি অভিযানে অংশ নিয়েছিল।
উল্লেখযোগ্য মুক্তিযোদ্ধা:
বঙ্গবীর জেনারেল এম. এ. জি. উসমানী – মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক
বীর উত্তম লে. কর্নেল আবু তাহের
বীর বিক্রম মাহবুব আলী
বীর প্রতীক সুবেদার নাসির উদ্দিন
স্থানীয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা: শহীদ আলী আহমদ, শহীদ শামছুল হক প্রমুখ-
সিলেটের এই সাহস ও ত্যাগই ছিল মুক্তিযুদ্ধের জয় এবং দেশের স্বাধীনতার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এই তালিকা প্রমাণ করে—
সিলেট একসময় সরকারের কেন্দ্রবিন্দুতে, নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের আসনে ছিল সিলেটের মানুষ।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে, ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকেই দেখা যাচ্ছে এক ধরনের অবজ্ঞা ও উপেক্ষা।
ইউনুস সাহেব এবং তার উপদেষ্টা পরিষদ যেন সিলেটকে গণনায়ই রাখেননি।
প্রশ্ন হচ্ছে—
➡️ এই ঐতিহ্যবাহী, শিক্ষিত, দেশপ্রেমিক মানুষের অঞ্চলে কি একজনও যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন না, যিনি উপদেষ্টা পদে দায়িত্ব নিতে পারতেন?
➡️ না কি সিলেটের অবদান এখন আর কারো চোখে পড়ে না?
আরও বেদনাদায়ক বিষয় হলো—
সরকার পরিবর্তনের ১৪ মাস পেরিয়ে গেলেও, ইউনুস সাহেব কিংবা তার উপদেষ্টা পরিষদের কেউ একবারও সিলেট সফরের প্রয়োজন মনে করেননি!
যে সিলেট একসময় রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের প্রতীক ছিল, আজ সেটাই যেন রাজনীতির পরিত্যক্ত অঞ্চল।
এটা শুধু রাজনৈতিক অবহেলা নয়—
এটা সিলেটবাসীর প্রতি অপমান, একটি অঞ্চলের মর্যাদাকে ছোট করে দেখার চরম দৃষ্টান্ত।
আমরা ভুলে গেলে চলবে না, সিলেটের অবদান শুধু রাজনৈতিক নয়—
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, প্রবাসী শক্তি—সবকিছুর ভিতরেই সিলেটের রক্ত-মিশ্রিত শ্রম রয়েছে।
তাই আমি বলবো—
🟥 সময় থাকতে আমাদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে।
না হলে আগামী দিনে সিলেটবাসীর ভাগ্যে হয়তো আরও গভীর অবহেলা, বঞ্চনা আর অপমান লেখা থাকবে।
✍️ মোঃ জাসিমুল ইসলাম
- ইউনাইটেড আরব আমিরাত
প্রকাশক- victorytimes71.com

