স্বপ্নের ইউরোপ, লাশ হয়ে ভেসে ওঠে ভূমধ্যসাগরে

ভিক্টরি টাইমস ৭১
0

 

ভূমধ্যসাগর

জাসিমুল ইসলাম: ভালো জীবনের স্বপ্নে প্রতিবছর হাজারো তরুণ পাড়ি জমাচ্ছে ইউরোপের পথে। পরিবার-পরিজনের মুখে হাসি ফোটানোর আশায় তারা জীবন বাজি রেখে উঠে পড়ছে দালালের দেওয়া ছোট ছোট নৌকায়। কিন্তু ইউরোপের সেই স্বপ্ন অনেক সময়ই হয়ে দাঁড়ায় মৃত্যুর ফাঁদ।


আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছে। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই নৌকা ডুবে যাওয়া, সাগরের উত্তাল ঢেউ আর নৌকায় খাবার-পানির সংকটের কারণে অসংখ্য প্রাণ শেষ হয়ে যাচ্ছে মাঝ সমুদ্রে।


বাংলাদেশসহ আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশ থেকে মানুষ দালালের খপ্পরে পড়ে অবৈধ পথে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করছে। অনেকে হয়তো সৌভাগ্যক্রমে তীরে পৌঁছাতে পারছে, কিন্তু অনেকের স্বপ্ন শেষ হয় লাশ হয়ে সাগরের বুকে ভেসে ওঠায়।




📊 পরিসংখ্যান: অভিবাসন ও মৃত্যু


২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী অভিবাসন যাত্রায় অন্তত ৮,৯৩৮ জন প্রাণ হারিয়েছে, যা এক দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ বছর ছিল ।

এর মধ্যে ভূমধ্যসাগরে মারা গেছে প্রায় ২,৪৫২ জন, যা ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করার সময় ঘটে ।

২০১৪–২০২৩ এর মধ্যে IOM রিপোর্ট করেছে, প্রায় ৬৩,২৮৫ জন মানুষ অভিবাসনের পথে মারা গেছে বা নিখোঁজ, যার মধ্যে ২৮,৮৫৪ মৃত্যু ভূমধ্যসাগরে এবং ৬০% মৃত্যুই ডুবে মারা যাওয়ার কারণে হয়েছে ।

UNICEF জানিয়েছে, গত দশ বছরে ৩,৫০০ শিশুকন্যা মৃত্যু বা নিখোঁজ রয়েছেন কেন্দ্রীয় ভূমধ্যসাগর রুটে — এক দশক ধরে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১টি শিশু ।


সাম্প্রতিক ট্র্যাজেডি: Lampedusa শিপরেক


১৩ আগস্ট ২০২৫-এ ইতালির লাম্পেদুজার কাছে দুই নৌকা ডুবে অন্তত ২৬ জনের মৃত্যু, আর প্রায় ৩৫ জন নিখোঁজ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে। রক্ষা পেয়েছেন ৬০ জন ।

এই দুর্ঘটনায় পরিবার হারানো শিশুরা সহ, নবজাতক ও মহিলা রয়েছে বলে জানায় আইওএম ও UNHCR ।

এই বছর কেন্দ্রীয় ভূমধ্যসাগরে ৬৭৫ জনের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে ।


🧭 কারণ ও বিশ্লেষণ


দালালদের অতিরিক্ত বোঝাই করা নৌকা, নিরাপত্তার অভাব, খাদ্য ও পানি সংকট, আর সমুদ্রের অসহ্য ঢেউ মিলিয়ে এই যাত্রা প্রায়ই মৃত্যুর কারণ হয়ে ওঠে। বেশির ভাগ অভিবাসনপ্রত্যাশী ঐ ঝুঁকিপূর্ণ নৌকায় বোঝাই হয়ে ছুটে যায় ইউরোপের দিকে।


IOM-এর Missing Migrants Project তথ্য থেকে জানা গেছে, প্রাণ হারানোদের ৬০% মৃত্যু ডুবে যাওয়ার কারণে, আর অধিকাংশের পরিচয়ই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি ।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ইউরোপীয় নীতি—বিশেষত লিবিয়ার কোস্ট গার্ডকে সমর্থন—‘deterrence by drowning’ এর মতো কাজ করছে, যেখানে উদ্ধার কাজ বাধাগ্রস্ত এবং বিচ্ছিন্ন হচ্ছে ।


🇧🇩 বাংলাদেশি নির্যাতনের চিত্র

সারাভার্তাবহ বোঝায়, ৯৭৩৫ বাংলাদেশি ২০২৫-এর মধ্যে ইউরোপে পৌঁছেছে। তবে ৬৩% দালালদের হাতে আটক হয়ে নির্যাতন ও মুক্তিপণ বাধ্যতামূলক হয়েছে।

BRAC’র মতো সংস্থা বলছে, তারা দালালদের “সহজ” প্রতিশ্রুতি দেখে জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিচ্ছে।


মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, দালাল চক্র ভেঙে না দিলে এই মৃত্যুর মিছিল থামবে না। একইসঙ্গে নিরাপদ অভিবাসন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি বলে মনে করেন তারা।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
banner
banner

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Out
Ok, Go it!
To Top