নিউইয়র্কে ইতিহাস: প্রথম মুসলিম মেয়র জোহরান মামদানি

ভিক্টরি টাইমস ৭১
0

ছবি: সংগৃহীত 

 আন্তর্জাতিক ডেস্ক| ভিক্টরি টাইমস৭১

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহর নিউইয়র্কে নতুন ইতিহাস রচনা করেছেন জোহরান ক্বোয়ামে মামদানি।

দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এই মুসলিম তরুণ নির্বাচিত হয়েছেন শহরটির প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে।


৩৪ বছর বয়সী মামদানির এই জয় শুধু নিউইয়র্ক নয়, পুরো যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতেই এক নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে।



মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানি পেয়েছেন ১০ লাখ ৬ হাজার ২৪২ ভোট, যা মোট ভোটের ৫০.৩ শতাংশ।

তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো পেয়েছেন ৮ লাখ ৩১ হাজার ৮০৩ ভোট (৪১.৬ শতাংশ)।


এ ছাড়া রিপাবলিকান প্রার্থী জন রেনল্ডস পেয়েছেন প্রায় ৬ শতাংশ ভোট।

এই ফলাফলের মাধ্যমে নিউইয়র্ক সিটির নেতৃত্বে উঠে এলেন এক তরুণ প্রগতিশীল রাজনীতিক— যার রাজনীতির মূলমন্ত্রই “মানুষের জন্য ন্যায্য জীবনযাপন নিশ্চিত করা।”



জোহরান মামদানি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৯১ সালের ১৮ অক্টোবর, উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায়।

তার বাবা মাহমুদ মামদানি উগান্ডার প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ও লেখক, আর মা মীরা নাইর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতা।


মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি পরিবারসহ নিউইয়র্কে আসেন এবং কুইন্স এলাকায় বড় হন।

শিক্ষাজীবনে তিনি Bowdoin College থেকে আফ্রিকান স্টাডিজে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

রাজনীতিতে প্রবেশের আগে তিনি হাউজিং কাউন্সেলর হিসেবে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে কাজ করেছেন।



২০২১ সালে মামদানি নির্বাচিত হন নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য হিসেবে।

তিনি ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্টস অব আমেরিকা (DSA)-এর সদস্য এবং নিজেকে “গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী” হিসেবে পরিচয় দেন।


২০২৪ সালে মেয়র পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেন তিনি। প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো, যিনি দীর্ঘদিন ধরে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মূলধারার নেতা হিসেবে পরিচিত।

তবে মামদানির প্রচারণা ছিল ভিন্নধর্মী — ধর্ম বা বর্ণ নয়, বরং বাসস্থান, জীবনযাত্রার ব্যয়, ও গণপরিবহন সংস্কার ছিল তার নির্বাচনী অঙ্গীকারের কেন্দ্রবিন্দু।



মামদানি নির্বাচিত হওয়ার পর সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন,


> “এই জয় শুধু একজন প্রার্থীর নয়— এটি নিউইয়র্কের বৈচিত্র্যের, ন্যায্যতার এবং পরিবর্তনের জয়।”




ব্রুকলিনের সমাজকর্মী মেগান মার্কস বলেন,


> “মামদানি আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কথা বলেছেন, তাই আমরা তাকে বেছে নিয়েছি।”




অন্যদিকে, কুইন্সের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ট্যাক্সিচালক ইফতেখার খান বলেন,


> “৯/১১ পর মুসলিমরা যেমন বৈষম্যের মুখে পড়েছিল, মামদানির জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়েছে।”




মামদানির প্রচারণায় ২৫টিরও বেশি ভাষা ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে বাংলা, উর্দু ও আরবি ছিল।


৭৮% মুসলিম ভোটার তার পক্ষে ভোট দেন।


নির্বাচনী প্রচারণার বড় অংশ পরিচালিত হয় স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে— বিলবোর্ড বা টিভি বিজ্ঞাপন ছাড়াই।


তার প্রচারণার মূল স্লোগান ছিল: “A City That Works for Everyone.”




রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মামদানির এই জয় যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রগতিশীল ধারার জন্য বড় একটি সাফল্য।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,


> “জোহরান মামদানির জয় যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক ন্যায়ের নতুন রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রতীক।”




তবে তার সামনে চ্যালেঞ্জও রয়েছে— নিউইয়র্কের বিশাল বাজেট পরিচালনা, গৃহহীনতা কমানো ও জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ন্ত্রণ— যা তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।



জোহরান মামদানি ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়রের দায়িত্ব নেবেন।

প্রথম ১০০ দিনের পরিকল্পনায় রয়েছে—


গণপরিবহন ফ্রি করা


ভাড়া নিয়ন্ত্রণ নীতি বাস্তবায়ন


ছোট ব্যবসায়ীদের কর রেহাই


বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিক চালু



এক সময় আফ্রিকার মাটিতে জন্ম নেওয়া এক অভিবাসী শিশুর নিউইয়র্কের মেয়র হওয়া কেবল একটি শহরের সাফল্য নয়— এটি বৈচিত্র্য, সহাবস্থান ও আশার প্রতীক।

নিউইয়র্ক আজ বলছে—


> “নেতৃত্ব নির্ধারণ করে না তোমার জন্মস্থান, বরং তোমার দৃষ্টিভঙ্গি।”


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
banner
banner

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Out
Ok, Go it!
To Top