আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন। আজ রোববার বিকেলে এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতির মাধ্যমে এই ঘোষণা আসতে পারে বলে নিশ্চিত করেছে সরকারি সূত্র।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রনীতিতে বড় পরিবর্তন
দীর্ঘদিন ধরে লন্ডন বলছিল, শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। কিন্তু গাজার চলমান মানবিক বিপর্যয় এবং পশ্চিম তীরে অব্যাহত বসতি স্থাপন প্রকল্পের কারণে ব্রিটিশ সরকার মনে করছে—এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।
মন্ত্রীরা বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রক্রিয়াকে টিকিয়ে রাখতে এটি একটি নৈতিক দায়িত্ব।
ইসরায়েলের কড়া প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘সন্ত্রাসকে পুরস্কৃত করা’ বলে মন্তব্য করেছেন। জিম্মিদের পরিবারও যুক্তরাজ্যের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, এখনও জীবিত ২০ জন জিম্মি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এমন পদক্ষেপ অনুচিত।
গাজায় ভয়াবহ পরিস্থিতি
জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন সম্প্রতি জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছে। যদিও ইসরায়েল এটিকে ‘মিথ্যা ও বিকৃত’ দাবি করে প্রত্যাখ্যান করেছে।
গাজার সর্বশেষ স্থল অভিযানে লাখ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা একে ‘বিপর্যয়কর’ বলে উল্লেখ করেছেন।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাজ্যের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালসহ আরও কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যেই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছে। গত বছর স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়। বর্তমানে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রায় ৭৫ শতাংশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পথে
দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান বলতে পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনকে বোঝায়, যার রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম। তবে বর্তমানে ইসরায়েল উভয় অঞ্চল দখল করে রেখেছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক মহল মনে করছে, যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতি ফিলিস্তিনের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইকে নতুন গতি দেবে।
লেবার পার্টির চাপ ও অভ্যন্তরীণ সমর্থন
স্টারমারের দলের ভেতর থেকে দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছিল। সম্প্রতি অর্ধেকেরও বেশি লেবার এমপি এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেন। বিশেষ করে দলের বামপন্থী এমপিরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন।
সরকার পরিষ্কার জানিয়েছে—ভবিষ্যতের কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না।
